করোনার অত্যাবশ্যকীয় ওষুধ ও দাম নিয়ন্ত্রণ

ড. মিহির কান্তি মজুমদার

স্বাস্থ্য মানুষের একটি অন্যতম মৌলিক অধিকার। সে প্রেক্ষিতে এ মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় চিকিৎসা সুবিধাপ্রাপ্তির পাশাপাশি ওষুধের প্রাপ্যতা ও ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে থাকা বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। ২০৩০ সালে সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা (ইউনিভার্সাল হেলথ কভারেজ) এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের জন্যও সাধ্যের মধ্যে ওষুধের মূল্য থাকা অপরিহার্য। অপরদিকে অসুস্থতায় চিকিৎসা ও ওষুধের প্রাপ্যতা জীবন-মরণের সঙ্গে সম্পর্কিত বিধায় ওষুধ সেক্টরে অত্যধিক মুনাফা, বঞ্চনা এবং অন্যান্য বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির সুযোগও একটু বেশি। ১৯৭১ সালে সদ্য স্বাধীন প্রায় বিধ্বস্ত অর্থনীতি এবং ভঙ্গুর আর্থ-সামাজিক অবস্থার এদেশে ওষুধের প্রাপ্যতায় ছিল মারাত্মক সঙ্কট। বিদেশী ওষুধ কোম্পানি ছাড়াও দেশী ওষুধ কোম্পানির অধিকাংশ ছিল পশ্চিম পাকিস্তানে। ৬০ থেকে ৭০ ভাগ ওষুধ স্বাধীনতা-পূর্ব সময়ে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে এদেশে আনতে হতো। সে কারণে স্বাধীন দেশে জনগণের জরুরী চিকিৎসায় অত্যাবশ্যকীয় ওষুধসহ সাধারণ ওষুধের প্রাপ্যতায় শুরু হয় মারাত্মক সঙ্কট। পাশাপাশি বাজারে ছিল অপ্রয়োজনীয় ওষুধের ছড়াছড়ি এবং এর অপব্যবহার। এ জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশের প্রথম পঞ্চম বার্ষিক পরিকল্পনায় উল্লেখপূর্বক সঙ্কট নিরসনে জাতীয় ওষুধনীতি প্রণয়ন এবং দেশে ওষুধ উৎপাদনের সক্ষমতা অর্জনের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। সে ধারাবাহিকতায় আমদানিকৃত ওষুধের মূল্য সাশ্রয়ী রাখার জন্য ১৯৭৩ সালেই টিসিবির মাধ্যমে ওষুধ আমদানি শুরু করা এবং মানসম্মত ওষুধ দেশে উৎপাদনের কার্যক্রম ত্বরান্বিত করার জন্য ১৯৭৪ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় ওষুধ প্রশাসন পরিদফতর।

বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোতে যেহেতু ওষুধ উৎপাদনে সক্ষমতা ও সুচিকিৎসা গ্রহণের সুযোগ কম থাকে, এ সুযোগে অনেক দেশী-বিদেশী ওষুধ কোম্পানি উন্নয়নশীল দেশে বিভিন্ন অপ্রয়োজনীয় ওষুধ তৈরি এবং তা বিপণনে আগ্রাসী মার্কেটিং ব্যবস্থা সৃষ্টি করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ১৯৭০-এর দশকে ওষুধের অপ্রয়োজনীয় এ বাজারকে ‘ঞযবৎধঢ়বঁঃরপ ঔঁহমষব’ হিসেবে অভিহিত করে। এ অবস্থা নিরসনে উক্ত সংস্থা ১৯৭৭ সালে অত্যাবশ্যক ওষুধের (ঊংংবহঃরধষ ফৎঁমং) তালিকা প্রণয়ন, উৎপাদন বৃদ্ধি এবং মূল্য নিয়ন্ত্রণের পরামর্শ প্রদান করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রথমে জনগণের স্বাস্থ্য রক্ষায় অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ ওষুধকে অত্যাবশ্যকীয় ওষুধ হিসেবে তালিকাভুক্তির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। পরবর্তীতে ২০০২ সালে সংজ্ঞা পরিবর্তন করে জনগণের অগ্রাধিকারভিত্তিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রাপ্যতা, কার্যক্ষমতা, সহজলভ্যতা এবং ক্রয়সীমার মধ্যে থাকা ওষুধগুলোকে অত্যাবশ্যকীয় ওষুধ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করে এবং প্রত্যেক দেশে নিজস্ব জাতীয় ঔষধনীতি প্রণয়নের নির্দেশনা প্রদান করে।

সে প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে ১৯৮২ সালের ২৭ এপ্রিল তৎকালীন পিজি (বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়) হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডাঃ নুরুল ইসলামের সভাপতিত্বে জাতীয় ঔষধনীতি প্রণয়ন কমিটি গঠন করা হয়। চিকিৎসক, শিক্ষক, ওষুধ বিশেষজ্ঞ, গবেষক এবং ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধির সমন্বয়ে গঠিত এ কমিটি পরদিনই কার্যক্রম করে। এক হাজার কর্মঘণ্টার বেশি ব্যয় করে দেশের প্রথম জাতীয় ঔষধনীতি ১৯৮২ প্রণয়ন করে। এশিয়ার প্রথম জাতীয় ঔষধনীতি হিসেবে বাংলাদেশের ঔষধনীতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ অনেক স্বনামধন্য সংস্থা কর্তৃক প্রশংসিত হয়। ১৯৮২-এর পূর্ব পর্যন্ত বাংলাদেশে অবিভক্ত ভারতে প্রণীত উৎঁম অপঃ, ১৯৪০, উক্ত আইনের সংশোধনী (১৯৪৬) এবং উক্ত আইনের আলোকে প্রণীত উৎঁম চড়ষরপু, ১৯৪৫ ও সংশোধনী (১৯৪৬) ছিল ওষুধ উৎপাদন, আমদানি, রফতানি ও বিপণনের জন্য একমাত্র আইন ও বিধিমালা। প্রয়োজনের তুলনায় এর বিধি-বিধান এবং প্রয়োগ এতই দুর্বল ছিল যে, ওষুধের মূল্য নির্ধারণের দায়িত্ব পালন করছিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ওষুধকে অত্যাবশ্যকীয় বাণিজ্যিক পণ্য গণ্য করে ঊংংবহঃরধষ ঈড়সসড়ফরঃরবং অপঃ-১৯৫৭-এর আওতায় মূল্য নির্ধারণ করা হতো। ওষুধ নিয়ন্ত্রণের জন্য একমাত্র প্রতিষ্ঠান ঔষধ প্রশাসন পরিদফতরে অফিসারের সংখ্যা ছিল মাত্র ৩২ জন। এর মধ্যে পরিদর্শকের সংখ্যা ২০।

১৯৮১ সালে দেশে ১৬৬টি ওষুধ কোম্পানি ওষুধ উৎপাদন করলেও দেশে উৎপাদিত ওষুধের ৭০% ছিল মাত্র ৮টি বহুজাতিক ওষুধ কোম্পানির দখলে। অবশিষ্ট ৩০% উৎপাদন করত ২৫টি মধ্যম শ্রেণীর ওষুধ কোম্পানি। দেশী ছোট ১৩৩টি কোম্পানির উৎপাদন সক্ষমতা ছিল মাত্র ১৫%। এসব ছোট ওষুধ কোম্পানিকে সহজ প্রক্রিয়ায় তরল ফর্মুলেশনের ওষুধ উৎপাদনেই সীমিত থাকতে হতো। বহুজাতিক কোম্পানির উচ্চ প্রযুক্তির ওষুধ উৎপাদনের সক্ষমতা থাকলেও তারা অন্যান্য ওষুধের পাশাপাশি প্রচুর ভিটামিন, গ্রাইপ ওয়াটার, এনজাইম, টনিক, কফ-সিরাপ, এলকালিসহ বিভিন্ন অপ্রয়োজনীয় ওষুধ উৎপাদন ও বাজারজাতে নিয়োজিত ছিল। ব্রিটিশ ফার্মাকোপিয়ায় এ্যান্টিবায়োটিকের মিশ্রণ, ভিটামিনের মিশ্রণ, ভিটামিন-মিনারেলের মিশ্রণ এসব অনুমোদন করে না। কারণ, এতে ওষুধের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায় না। বরং এ মিশ্রণ দেখিয়ে ওষুধের দাম বেশি রাখা হয়। আইনের দুর্বলতা ও প্রয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতার অভাবে এসব বড় কোম্পানি এরূপ অযৌক্তিক মিশ্রণের পাশাপাশি ওষুধের মূল্যে লাগামহীন মুনাফা আহরণে ব্যস্ত ছিল। এদেশে ওষুধ উৎপাদনের প্রযুক্তি হস্তান্তরের তেমন উল্লেখযোগ্য কোন প্রক্রিয়াই ছিল না। জনগণের মধ্যেও চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে সরাসরি ব্যবহার এবং এ্যান্টিবায়োটিকসহ অন্যান্য ওষুধের যথাযথ ডোজ অনুসরণ না করার প্রবণতাও ছিল ব্যাপক।

জাতীয় ঔষধনীতি প্রণয়ন কমিটি ওষুধ উৎপাদন, মূল্য নির্ধারণ ও বিপণনে বিদ্যমান অতিমাত্রার বিশৃঙ্খলা রোধকল্পে ১৬টি অগ্রাধিকারমূলক বিষয় চিহ্নিত করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুযায়ী ওষুধের প্রাপ্যতা, মান ও যথাযথ ডোজ ব্যবহারের বিষয়টি বিবেচনায় রাখা হয়। সার্বিক দিক পর্যালোচনা করে কমিটি জাতীয় ঔষধনীতি ১৯৮২ প্রণয়ন করে। ১৭৪২টি ওষুধ অপ্রয়োজনীয় বিবেচনায় এগুলোর উৎপাদন ও বিপণন বন্ধের সুপারিশ করে। সে প্রেক্ষাপটে এসব সুপারিশ বাস্তবায়নের জন্য সরকার উৎঁম ঈড়হঃৎড়ষ ঙৎফরহধহপব, ১৯৮২ জারি করে। এ নীতি এবং অধ্যাদেশ এদেশে ওষুধ শিল্পের বিকাশে এবং জনগণের কাছে ওষুধ সহজলভ্য করার ক্ষেত্রে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তনের সূচনা করে। জাতীয় ঔষধনীতিতে দেশে উৎপাদন হয় এমন ওষুধ আমদানি বন্ধ, ১৫০টি অত্যাবশ্যকীয় ওষুধ নির্ধারণ, সরকার কর্তৃক অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের মূল্য নিয়ন্ত্রণ, অত্যাবশ্যকীয় ওষুধ উৎপাদন বৃদ্ধি, অপ্রয়োজনীয় ওষুধ উৎপাদন বন্ধ, ওষুধের কাঁচামাল ও প্যাকেজিংয়ের খরচের অনুপাতে ওষুধের মূল্য নির্ধারণ, এ্যান্টাসিড, ভিটামিনসহ সহজ প্রক্রিয়ার ওষুধ শুধু দেশী কোম্পানি কর্তৃক তৈরি ইত্যাদি নির্দেশনা অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ঔষধ প্রশাসন পরিদফতর এবং এর ল্যাবরেটরির সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়। যুগোপযোগী এ সমন্বিত জাতীয় ঔষধনীতিতে ইতিবাচক ফল আসে সঙ্গে সঙ্গেই।

১৯৮১ সালে বহুজাাতিক কোম্পানিতে দেশের চাহিদার ৭০% ওষুধ উৎপাদন হতো। সরকারের হাসপাতালের ওষুধ চাহিদার ৮০% এবং অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের উৎপাদনের ৭০% এসব বহুজাতিক কোম্পানির নিয়ন্ত্রণে ছিল। মাত্র দশ বছরের ব্যবধানে চিত্র সম্পূর্ণ উল্টে যায়। ১৯৯১ সালে দেশী কোম্পানিগুলো বাজারের ওষুধের প্রায় ৬৫%, সরকারের ওষুধ চাহিদার ৮০% এবং অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের ৮০% উৎপাদন শুরু করে। অত্যাবশ্যকীয় ওষুধসহ ওষুধের যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ হওয়ায় ওষুধের মূল্য কমে এবং বেশিরভাগ জনগণের ক্রয়সীমায় চলে আসে, যা তাদের চিকিৎসা গ্রহণের সক্ষমতা বৃদ্ধি করে। জাতীয় ঔষধনীতির কারণে বর্তমানে দেশের ওষুধ চাহিদার প্রায় ৯৮% ওষুধ দেশেই উৎপাদন হয়। বর্তমানে বাংলাদেশ একটি ওষুধ আমদানিকারক দেশের পরিবর্তে রফতানির দেশে রূপান্তর হয়।

কোন বিপ্লবের পরে যেমন কিছু মহল সেখানে প্রতিবিপ্লবের ক্ষেত্র তৈরিতে নিয়োজিত হয়, এ দেশে ওষুধ উৎপাদনের বিপ্লবও এর ব্যতিক্রম নয়। পরবর্তী সময়ে দেশে ওষুধ উৎপাদন নীতিতে যেসব পরিবর্তন হয়েছে, তাতে জনগণ ও জনস্বাস্থ্যের লাভের চেয়ে ক্ষতি হয়েছে বেশি। এটি আমাদের কথা নয়, অনেক ওষুধ বিশেষজ্ঞই এ মত পোষণ করেন। প্রথম পদক্ষেপ আসে ১৯৯৫ সালে। অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের তালিকা ১৫০টির স্থলে ১১৭টি করা হয়। এ সুযোগে সংশ্লিষ্ট ওষুধ কোম্পানি অবশিষ্ট ৩৩টি ওষুধের দাম বৃদ্ধি করে নেয়। তবে জাতীয় ঔষধনীতি ২০০৫ প্রণয়নে ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি। এ নীতিতে অনেক বিষয় শিথিল করা হয় এবং কোন কোন ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞার নির্দেশনা অস্পষ্ট রাখা হয়। মূল্য নির্ধারণের আগের পদ্ধতি একটু শিথিল করা, অত্যাবশ্যকীয় ওষুধ উৎপাদনের বাধ্যবাধকতা না রাখা এবং এর মূল্য নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি সম্পর্কে স্পষ্ট নির্দেশনা না থাকা, ওষুধের মিশ্রণ উৎপাদনের সুনির্দিষ্ট নিষেধাজ্ঞা না রাখা, দেশী কোম্পানি কর্তৃক উৎপাদিত সহজ প্রকৃতির ওষুধ বিদেশী কোম্পানিকে উৎপাদনের সুযোগ দেয়া ইত্যাদি কারণে জাতীয় ঔষধনীতি ১৯৮২-এর গতি অনেকটাই বাধাপ্রাপ্ত হয়। বিশেষ করে ২০০৫-এর নীতিতে Third Party Licensing-এর নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে দেয়ায় অনেক দেশী কোম্পানিতে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়। এসব নিরসনে জাতীয় ঔষধনীতি ২০১৬ প্রণয়ন করা হলেও উৎঁম অপঃ ১৯৪০ এবং উৎঁম (Control) ordinance-১৯৮২-এর আলোকে বর্তমান সময়ের জন্য প্রযোজ্য একটি সমন্বিত আইন ও বিধি-বিধান প্রণয়নের নির্দেশনা ছাড়া সেখানেও তেমন উল্লেখযোগ্য কোন উপাদান নেই। এ নীতির আলোকে খসড়া ঔষধ নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৯ প্রণয়ন করা হয়েছে, কিন্তু তা চূড়ান্ত হয়নি এখনও। জাতীয় ঔষধনীতি ২০১৬ প্রণয়নকালে পরিশিষ্ট আকারে ২৮৫টি এ্যালোপ্যাথিক ওষুধকে অত্যাবশ্যকীয় ওষুধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এ তালিকাও হালনাগাদ করা প্রয়োজন। বরং বৈশি^ক করোনা মহামারীকালে তা আরও বেশি প্রয়োজন।

চলমান বৈশ্বিক করোনা মহামারীতে ওষুধের চাহিদা ও ব্যবহার বেড়েছে বহুগুণ। মহামারী কমে গেলেও এ রোগ আঞ্চলিক রোগ (ঊহফবসরপ) হিসেবে থাকবে অনেকটা সময়। অনেকদিন এ রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ যেমন- আইভারমেকটিন, ফেক্সো ফেনাডিন, মনটিলুকাস, ডেক্সোমিথাসন, রেমডিসিভির, মলনুপিরাভির, ফেভিপিরাভির ইত্যাদি অন্য রোগের ওষুধ হিসেবে আবিষ্কার হয়েছে। কোভিড রোগের উপসর্গ নিরসনেও কাজ করছে বলে এগুলো এ মহামারী নিয়ন্ত্রণে ব্যবহারের অনুমতি দেয়া হয়েছে। ফার্মেসির ভাষায় যাকে বলে ৎবঢ়ঁৎঢ়ড়ংরহম। সঙ্গে আছে করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিকে অন্য রোগের সংক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য এজিথ্রোমাইসিন বা অন্য কোন এ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার। দেশে এখনও চিকিৎসা ব্যয়ের ৮০% সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বহন করতে হয়। এ সময় বৈশ্বিক মহামারীর চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধগুলোকে অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা এবং মূল্য সাশ্রয়ী রাখার বিষয়টি ভাবতে হবে জরুরীভাবেই। বিশেষ করে করোনা আক্রান্তের চিকিৎসার জন্য যেসব ওষুধ এদেশে উৎপাদন হয়। ভাবতে হবে যথাযথ ডোজে এ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ না করার কারণে এ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সের ভয়াবহতা সম্পর্কেও। পাশাপাশি জাতীয় ঔষধনীতি ১৯৮২ বিবেচনায় রেখে জাতীয় ঔষধনীতি ২০১৬-এর নির্দেশনার আলোকে প্রয়োজনে খসড়া ওষুধ (নিয়ন্ত্রণ) আইন হালনাগাদ করা এবং এর প্রয়োগ ত্বরান্বিত করাও অত্যাবশ্যক। এসব বিষয় সক্রিয় বিবেচনায় নিতে বিলম্ব হলে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনেও এর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে।