উদ্দীপন, বাংলাদেশ সোসাইটি ফর কালচারাল অ্যান্ড সোশ্যাল স্টাডিজ ও উত্তরবঙ্গ জাদুঘরের যৌথ আয়োজনে “ছিটমহল বিনিময় : ঐতিহাসিক মানবিক অর্জন” শীর্ষক আলোচনা সভা

নোবেলদাতাদের চোখে ছানি না থাকলে ছিটমহলের শান্তিপূর্ণ সমাধানের কারণে শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদি শান্তিতে নোবেল পেতেন বলে মন্তব্য করেছেন উত্তরবঙ্গ যাদুঘর ট্রাস্ট্রি বোর্ডের চেয়ারম্যান এসএম আব্রাহাম লিংকন।
আজ মঙ্গলবার (১ আগস্ট) সকাল সাড়ে ১০ টায় কুড়িগ্রাম শেখ রাসেল অডিটোরিয়ামে ‘ছিটমহল বিনিময়: ঐতিহাসিক মানবিক অর্জন’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। বাংলাদেশ সোসাইটি ফর কালচারাল এন্ড সোশ্যাল স্টাডিজ, বেসরকারি সংগঠন উদ্দীপন ও উত্তরবঙ্গ যাদুঘর সেমিনারটির আয়োজন করে।
সভাপতির বক্তব্যে এসএম আব্রাহাম লিংকন বলেন, আগে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ছিল না। এখন ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ জ্বলছে, আলপথ এখন রাজপথ হয়েছে।
আব্রাহাম লিংকন বলেন, আজকের ছিটমহল এবং ৮ বছর আগের ছিটমহলের মধ্যে বিশাল পার্থক্য হয়েছে। এক সময় স্বাধীনতা বিরোধীরা গোলামী চুক্তি বলেছিল। অথচ এই চুক্তি ৫১ হাজার মানুষকে বন্দিদশা থেকে মুক্তি দিয়েছে। শোকাবহ আগস্টে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছিটমহলবাসীদের জীবনে আলোক বর্তিতা নিয়ে এসেছেন। এসময় তিনি বলেন, নোবেলদাতাদের চোখে ছানি না থাকলে ছিটমহলের শান্তিপূর্ণ সমাধানের কারণে শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদি শান্তিতে নোবেল পেতেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ জানান, আগামী বছর থেকে এই ঐতিহাসিক দিনটিকে রাস্ট্রীয়ভাবে পালন করা হবে বলে আমি কথা দিচ্ছি। এছাড়াও তিনি বলেন, জনসংখ্যা বিষয়ে যে সকল বিরোধ রয়েছে সেটি মিটিয়ে ফেলা হবে।
মুল প্রবন্ধ উপস্থাপনাকালে রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ বলেন, দুটি দেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের লাঞ্চনা-বঞ্চনার অবসান ঘটিয়ে একটি রক্তপাতবিহিন ভূখন্ড বিনিময় ও মানুষ বিনিময়ের ঘটনাটি বিরল হলেও, সেভাবে প্রচার করা হয়নি।
বিলুপ্ত বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা দাবি তোলেন, ১ আগস্ট তারিখকে রাস্ট্রীয়ভাবে ছিটমহল মুক্ত দিবস হিসেবে পালন করা হোক।
পুলিশ সুপার আল আসাদ মো. মাহফুজুল ইসলাম বলেন, ছিটমহলের মানুষের ভিতরের যে কথা তা ডকুমেন্টশন করা দরকার। কারণ এই মানুষগুলো সারাজীবন থাকবেন না। র্যাডক্লিফ দেশ ভাগ করে একটি টিউমার রেখে গেছেন। দীর্ঘদিনের সংগ্রামের পর আপনারা টিউমারটি অপারেশন করতে পেরেছেন। এই টিউমারের ব্যাথা ৬৮ বছর ধরে প্রজন্মের পর প্রজন্ম আপনারা ভোগ করে গেছেন। এর প্রতিকার আপনারা করতে পারেন আন্তর্জাতিক আদালতের মাধ্যমে বিচার চেয়ে।
তিনি আরও বলেন, ভারত-বাংলাদেশ চুক্তির ফলে যে বিশাল অর্জন হয়েছে, তার জন্য বিভিন্ন মহলের কাজ করা দরকার। এটি শেখ হাসিনা সরকারের বিশাল সাফল্য অথচ তিনি আন্তর্জাতিকভাবে সম্মানিত হননি। এটি নিয়েও কাজ করা দরকার।
আলোচনায় অংশ নিয়ে সাবেক সচিব ড. মিহির কান্তি মজুমদার বলেন, ছিটমহলগুলোর জন্য বাংলাদেশ সরকার অনেক কিছু করছেন। তাদের জন্য আরও কাজ করার সুযোগ রয়েছে। সেই কাজগুলো সবাই মিলে করা দরকার।
২০১৫ সালের ১ আগস্ট বাংলাদেশ ও ভারতের ১৬২টি ছিটমহল দুই দিনের মধ্যে বিনিময় হয়। এতে ৫১ হাজার ছিটমহলবাসী বন্দিদশা থেকে মুক্তি লাভ করেন। দীর্ঘদিন ধরে অমানবিক জীবন যাপনকারী ছিটবাসীর উন্নয়নের পথ সুগম হয়। আর কয়েক বছরে বাংলাদেশী ছিটমহলগুলো অভূতপূর্ব উন্নয়ন ঘটে। সভায় বক্তারা ছিটমহল বিনিময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদানের কথা স্বীকার করে ছিটমহলের ইতিহাস সংরক্ষণের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ। আরও বক্তব্য রাখেন পুলিশ সুপার আল আসাদ মো. মাহফুজুল ইসলাম, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. জাফর আলী, বিলুপ্ত বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির সাবেক সভাপতি মইনুল হক, সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা, উদ্দীপনের নির্বাহী পরিচালক বিদ্যুৎ কুমার বসু, অনুপম রায় প্রমুখ।
https://bengalnews24.com/news/16259